ইয়ারব হোসেন: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকা। নিন্ম এলকায় নদীর লবনাক্ত পানিতে ডুবে আছে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। করোনার মধ্যে এসব এলাকয় এক প্রকার ডুব সাঁতার দিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। কখনো নৌকায় কখনো গলা পানির মধ্যে দাড়িয়ে করোনা সচেতনতাও প্রচার করছেন তারা। এলাকাঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আম্পানে বিধ্বস্ত প্রতাপনগরের চাকলা, নাকনা, কুড়িকাহনিয়া, হিজলিয়া, কল্যাণপুর, কোলা কমিউনিটি ক্লিনিক ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বালিয়াখালী কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়েই নৌকাযোগে বারান্দায় উঠে ক্লিনিকগুলো খুলে বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় রোগীর সংখ্যা একেবারেই নগন্য বলে জানান তারা। করোনার মধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পানি বন্দী মানুষের পাশে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা অব্যহত রেখেছেন তারা। জরুরী ভাবে সেবা দিতে কাদা-পানিতে ভিজেও বাড়ি বাড়ি হাজির হচ্ছেন এসব ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারীরা। এছাড়া উপজেলার আনুলিয়ার বাসুদেবপুর, খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর ক্লিনিক দুটি আম্পানের তাÐবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেবা প্রদানে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
গতকাল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা কমিউনিটি ক্লিনিকের ভেতরে পানি থৈ থৈ করছে। ক্লিনিকের আসবাবপত্র ও ঔষধগুলো টেবিলের উপরে সাজানো রয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহকারী মুহসীন উদ্দীন জানান কোলা ক্লিনিকে নৌকাযোগে আসতে হয়। ঝড়ের রাতে বাঁধ ভেঙে ক্লিনিকের ভেতরে পানি উঠে যাওয়ায় ঔষধ ও জরুরী কাগজপত্র উঁচু টেবিলের উপর রেখে টেবিলের উপরই বসতে হয়। এমতাবস্থায় ক্লিনিকে রোগী আসা প্রায় বন্ধ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশ মত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঔষধপত্র দিয়ে আসছি।
প্রতাপনগরের চাকলা, নাকনা, হিজলিয়া ও কল্যানপুর ক্লিনিকের একই অবস্থা। জোয়ার এলেই পানি থৈ থৈ করে। শ্রীউলার বালিয়াখালী ক্লিনিকেও জোয়ার-ভাটা খেলা করছে।
এছাড়া আম্পানের তাÐবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আনুলিয়ার বাসুদেবপুর ও খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর ক্লিনিক দুটি সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রচÐ ঝড়ে ক্লিনিক দুটির দরজা, জানালা ভেঙে গেছে। ক্লিনিক দুটি আগে থেকেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় স্বাস্থ্য কর্মীরা সেবা দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে ঝড়ে একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা ডা. সুদেষ্ণা সরকার জানান, প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নে জোয়ারের পানি ওঠা-নামা করায় ক্লিনিকগুলোতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিমকে তৎপর রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র দিতে বলা হয়েছে। জলাবদ্ধ পরিবেশে দূষণ ও পানিবাহিত রোগ যেন প্রকট আকার ধারণ না করে সেজন্য মেডিকেল টিমসহ স্যানিটারি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ত্রাণ পেতে দৌড়ঝাঁপ না করে মহামারি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী, পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের ৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের একই অবস্থা। পানির কারনে সেখানেও স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অজয় কুমার সাহা জানান, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে এখনো কোমর পানি। পানি থাকায় সেখানে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ক্লিনিকগুলোর স্বস্থ্য সহকারীদের জরুরী সেবা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনে বাড়ি বড়ি যাওয়র নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বস্থকর্মীরা নির্দেশনা মেনে মানুষের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
