সমাজের আলো: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনী ও রমজাননগর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের। বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত কাঁচা ঘর-বাড়ি, বিদ্যুৎ লাইন ও গাছ। পাঁচ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এখন পানি-বন্দি।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে ঝড়ের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নদীতে উত্তাল জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে ইউনিয়নের জেলিয়াখালী, নেবুবুনিয়া, পার্শ্বেমারী ট্যাকের হাটখোলা ও নাপিতখালী পয়েন্টে পাউবো বেড়িবাঁধ নদীতে ভেঙ্গে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। কয়েক হাজার মানুষ পানি-বন্দি হয়ে পড়েছে।
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. আতাউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে ইউনিয়নের কামালকাটি, ঝাপা, চাউলখোলা, চন্ডিপুর ও খুটিকাটা সংশ্লিষ্ট পাউবো বেড়িবাঁধ কপতাক্ষ নদে ভেঙ্গে সমগ্র ইউনিয়ন তলিয়ে ২০ হাজার মানুষ পানি-বন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন কবলিত স্থানে জোয়ার ভাটা অব্যাহত আছে। তবে, পাউবো কর্তৃপক্ষ বালির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন বাধার চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, দাতিনাখালী আতিয়ার মোড়লের বাড়ির সামনে এবং জুয়েল হ্যাচারিসহ দূর্গাবাটি নেছার মালির ঘের সংশ্লিষ্ট পাউবো বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানি-বন্দি হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছসহ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুর রউফ এবং রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন একই রকম ক্ষতির কথা জানান।
এদিকে শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসডিই) মো. রাশেদুর রহমান বলেন, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে নদীতে ভেঙ্গে গেছে। সার্বিক বিষয়টি পাউবো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্যামনগর উপজেলা সাব-জোনাল (এজিএম) মধুসুধন রায় বলেন, ঝড়ে উপজেলা ব্যাপী বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কবলে ৩৩ কেবি লাইনের ১৯টি সহ মোট ৪০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। সমগ্র উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচাঘর, গাছ ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ সঠিক ভাবে নিরুপনের চেষ্টা অব্যহত আছে। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৬০ হাজার নগদ অর্থ ও ৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সমগ্র উপজেলাকে সচল করার চেষ্টা চলছে তিনি জানান।