সমাজের আলো রিপোর্ট: সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ও ফিংড়ি সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চায়ের দোকান, মুদি, সেলুন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্লাব ও ঘরে বসছে জুয়ার আসর। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় এ আসর দিন দিন জমজমাট হয়ে উঠছে। সবার হাতেই স্মার্ট ফোন থাকায় বিভিন্ন সাইটে লাইভ খেলায় জমে উঠছে জুয়ার আসর। বিষয়টি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন সচেতন মহল।
ধুলিহর বাজার, ব্যাংদহা বাজার, ফিংড়ি, ভোমরা, আলিপুর, ঝাউডাঙ্গা ও পুরাতন সাতক্ষীরা বাজারে বেশিরভাগ খেলা নিয়ে বাজি ধরা হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা পেশাদার জুয়াড়ি। শুধু আইপিএল নয়, তারা সারা বছরই সিপিএল, বিগব্যাশ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বিভিন্ন কাউন্টি ম্যাচ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাজি ধরে থাকেন। এভাবে অনেকেই লাভের আশায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। তবুও নেশায় আসক্ত হয়ে বাজি খেলা ছাড়া তারা থাকতে পারেন না। এর ফলে জেলার প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় ছোট-খাটো চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অলিগলিতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে, টেস্ট, টি-২০ আসর, এমনকি দেশ-বিদেশের ঘরোয়া লিগ নিয়ে নিয়মিত চলে জুয়া। কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় কত রান করবে, কোন বোলার কয়টা উইকেট নেবে- এমন অনেক বিষয় নিয়ে বাজি ধরা হয়। সাধারণত জুয়ার খেলোয়াড়রা দুইভাবে বাজি ধরে থাকে। প্রথমত, একসঙ্গে কোনো চায়ের দোকান দোকান, সেলুন, হোটেল বা ঘরে বসে জুয়া খেলে। এরা বাজির টাকা নগদ পরিশোধ করে। দ্বিতীয়ত, বাড়ি, অফিস বা অন্যত্র বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচিতদের সঙ্গে বাজি ধরে। এরা টাকা লেনদেন এর জন্য একজন বিশ্বস্থ মানুষের কাছে খেলা শুরু হওয়ার আগেই জুয়ার বাজীর টাকা জমা রাখে। হাজার হাজার টাকা থেকে লক্ষ টাকা বাজীতে জুয়া চলছে। প্রতি ওভার কিংবা প্রতি বলেও বাজি ধরা হয়।
দোকানদার, সেলুনের নাপিত, ছাত্র সমাজ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বেশি। লোভের বশবর্তী হয়ে দিনমজুর ও প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরতরাও জুয়া খেলছেন। এদের কেউ কেউ বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে ও সুদে ঋণ নিয়ে জুয়ায় অংশ নিয়ে সব হারাচ্ছেন। খেলা শুরুর আগেই জুয়াড়িরা টেলিভিশন বা মোবাইলের সামনে বসে পড়েন। সবার হাতে হাতে থাকে মোবাইল ফোন। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক টাকার লেনদেন নিয়ে মাঝে মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবরও পাওয়া যায়।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বড়খামার গ্রামের আব্দুল হাইয়ের দোকানে আইপিএল খেলায় জুয়া ধরাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এ,এস,আই আজিমের অভিযানে দোকানটিতে কিছু দিন আইপিএল খেলা দেখানো বন্ধ ছিল। কিন্তু আবারও শুরু হয়েছে জমজমাট জুয়ার বাজী। এই দোকানে ৩টি ইউনিয়নের চিহ্নিত জুয়াড়ীরা সকাল থেকে জুয়ার টাকা লেন-দেন করে থাকে।
সচেতন মহলের মতে, আইপিএল জুয়া শুধু সাতক্ষীরা সদর নয়, জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জুয়াতে তরুণ ও যুবকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। খেলা হচ্ছে বিনোদন। এটি উপভোগ করার মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে। এটি কখনও জুয়ার মাধ্যম হতে পারে না। খেলাকে উপভোগ না করে জুয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলে অনেক বড় অঘটন ঘটতে পারে।
ভোমরা ইউনিয়নের একজন সমাজকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যেকোনো ধরণের জুয়া খেলা হারাম। জুয়া মানুষের মস্তিষ্ক খারাপ করে ফেলে। যারা বাজিতে হেরে যায় তারা টাকা খুইয়ে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজেও লিপ্ত হয়। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জুয়ায় জড়িত অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের এমনভাবে শাস্তি দিতে হবে যেন অন্যরা আর জুয়ায় আগ্রহ না দেখায়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সাতক্ষীরা সদরের দোকানে তাস, লুডু, কেরাম বোর্ডসহ সব ধরণের খেলা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কোথাও যদি টিভিতে খেলা নিয়ে বাজি ধরা হয় আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। খেলা দেখার জন্য দোকানপাট নয়, যার যার বাসায় বসে খেলা দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে লুকিয়ে লুকিয়ে বাজি খেললে আমাদের আওতার বাইরে থাকলে আমরা কিছু করতে পারি না। প্রত্যেক তরুণের অভিভাবককে এ ব্যাপারে নজর রাখা উচিত।’ এছাড়া তিনি কোথাও খেলায় বাজী ধরে জুয়া খেললে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানান।