সমাজের আলো : রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভেজাল মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ভেজাল মদ তৈরির কারখানার সন্ধানসহ বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ছয়জনকে। ডিবির দাবি, চক্রের সদস্যরা মদের উপাদান ইথানলের পরিবর্তে বিষাক্ত মিথানল মেশায়। যে কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক আমাদের সময়কে এ বিষয়ে বলেন, মদপানের পর মূলত দুটি কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। প্রথমত মদে নেশার উপাদান ইথাইলের পরিবর্তে মিথাইল মেশানোর কারণে। মিথাইল একজন ব্যক্তির কিডনি ও লিভার দ্রুত বা ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট করে দিতে পারে। যারা রাতে মদপানের কারণে সকালে মারা গেছেন, তারাও ভেজাল মদে এই মিথাইল সেবনের শিকার হয়েছেন, এমনটিই ধারণা আ ব ম ফারুকের। তার মতে, আর ইথাইলের পরিবর্তে মিথাইল মেশানোর কারণ হিসেবে দাম কম বলে জানান তিনি। মদপানে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আ ব ম ফারুক আরও বলেন, অনেকে আছে মদের সঙ্গে ঘুমেরসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করেন। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভেজাল মদ তৈরির অপরাধে ডিবির হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ, রেদুয়ান উল্লাহ, সাগর ব্যাপারী, নাসির আহমেদ রুহুল, জাহাঙ্গীর আলম এবং সৈয়দ আল আমিন। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও ও ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনে রাজধানীর ভাটারা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় মদ সেবনের কারণে অসুস্থ হয়ে ছয়জনের মৃত্যু ঘটে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানা এলাকায় মামলা রুজু হয়। ডিবির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এতে ভেজাল ও অবৈধ মদ তৈরি-বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এই চক্রের মূল হোতা নাসির দীর্ঘদিন ধরে মদ বিক্রি করে আসছে। মাঝে মাঝে একটি মদের বোতল খুলে ২/৩টি বোতল মদ তৈরি করত। সম্প্রতি ওয়্যার হাউসগুলোয় মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এরা নকল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। আর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের আশপাশ এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রঙ সংগ্রহ করে, চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে নকল মদ তৈরি করে। রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ এবং ইংলিশ বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের নাম করে মূলত স্প্রিট, রং আর পচা পানি বিক্রির এই বিষাক্ত মদের কারখানার চিফ কেমিস্ট জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর একসময় ভাঙ্গাড়ির দোকান কর্মচারী ছিল। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করাই ছিল তার মূল কাজ। নিরক্ষর এ দোকানদার এখন বিদেশি মদ তৈরির কারখানার প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা।




Leave a Reply

Your email address will not be published.