সমাজের আলো: গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর চরখালী গ্রামের জাকির হোসেন মধু নিজেকে পরিচয় দেন কোটিপতি হিসেবে। পৈতৃক জমিজমাসহ ৫ একরেরও বেশি জমিজমা রয়েছে তার। আছে বিশাল আকারের কয়েকটি পানের বরজও। গোয়ালে তার ১৫ থেকে ২০টি গরু। এত ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার পরও তার নামে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর কাবিখার আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা। এ ধরনের একটি বিত্তবান পরিবার ত্রাণের ঘর পাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে এসব তথ্য মিলেছে। অভিযোগ তুলে ধরে মন্তব্য জানতে চাইলে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ঘর পাওয়া জাকির হোসেন মধু অকপটে বলেন, ‘আমি যুবলীগ নেতা বলেই তো ঘর পেয়েছি।’ ওই এলাকার মৃত আ. ছত্তার সিকদারের স্ত্রী শাহানারা বেগম, মৃত তাজেম আলী সিকদারের স্ত্রী আলেয়া বেগম, রহিমউদ্দিন, মহিউদ্দিন, বিধবা সালেহা বেগম, রানী বেগম ও মোতাহার বেড়িবাঁধে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছেন। তারা ঝুপড়ি ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ তাদের মতো গরিবদের জন্য সরকারের দেওয়া ঘর দখল করেছে বিত্তবানরা। ওই এলাকার ছোবাহান প্যাদা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। আমাগো ঘর নাই। আর ধনী মানুষ মধু মিয়া ঘর পায়।’ আবদুর রহিম মাঝি বলেন, ‘বেড়িবাঁধে ঝুপড়ির মধ্যে থাহি, আমাগো ঘর দেয় না, পায় ধনীরা।’ এ কথা বলে তিনি দুচোখের পানি ছেড়ে দেন। গলাচিপা সদর ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান হিরণ জানান, জাকির হোসেন মধু বিত্তবান। নিজেকে তিনি এলাকার কোটিপতি হিসেবে দাবি করেন, প্রচার করেন। তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ঘর তাকে কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আমাদের তা জানা নেই। গলাচিপা ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাদী বলেন, ধনী হয়েও মধু কীভাবে গৃহহীনদের আবাসন সুবিধার ঘর পেয়েছে তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এ পর্যন্ত গরিবদের আবাসন সুবিধার জন্য ৭২টি ঘর তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।